paponblog

Wednesday, 22 August 2012

হিট্টি সভ্যতা


যদিও আমি ইতিহাসের ছাত্র নই, তবুও ইতিহাস নিয়ে বরাবরই আমার পড়তে ভাল লাগে, বিশেষ করে প্রাচিন সভ্যতার ইতিহাস সর্ম্পকে, আর তা পড়তে গেলে প্রায়ই Hittites শব্দটা পাই। প্রতিবারের মতই প্রশ্ন জাগে কি এর মানে? এক সময় খুজে পেলাম হিট্টি হল একটা জাতি বা সভ্যতার নাম। আমরা জানিযে তুরস্ক দেশটা ইউরোপ ও এশিয়ায় ছড়ানো। আর তুরস্কের এশিয় অংশই আনাতোলিয়া নামে পরিচিত এবং হিট্টিরা যিশুর জন্মের ২০০০ বছর আগে সেই আনাতোলিয়াতেই গড়ে তুলেছিল এক অতুলনীয় সভ্যতা। হিট্টিদের সভ্যতাকেঅতুলনীয় কেন বললাম? কারণ, ওরাই সভ্যতায় প্রথম ন্যায়বিচার চালু করেছিল; ব্যবহার করতে শিখিয়েছিল লোহা! হিট্টিরা কথা বলত ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষায়। তবে ওরা কোত্থেকে আনাতোলিয়ায় এসেছিল-সেসব ইতিহাস অনেকচেষ্টা করেও আজ অবধি জানা যায়নি। হিট্টি শব্দটা হিব্রু ভাষার বাইবেলে আছে। ওল্ড টেস্টামেন্টে শব্দটার অর্থ অবশ্য ‘হিটটিম’। ওখানে বলা হয়েছেহিটটিমরা -‘হেত এর সন্তান’, কেনান প্রদেশের সন্তান ছিলেন হেত । আমরা জানি হিব্রুভাষীরা প্রাচীন কেনান প্রদেশে বসবাস করত। হযরত ইব্রাহীম (আ মেসোপটেমিয়ার উর (বা উরুক) নগর থেকেই তো ঈশ্বরের নির্দেশে কেনান দেশে গিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে তা হলে কি দাঁড়াল? সময়টা যিশুর জন্মের ২০০০ বছরআগে। সে সময় হিট্টিরা আনাতোলিয়ায় প্রবেশ করে। তো সেই সময় আনাতোলিয়ায় যে সব জাতি বাস করত তারা কথা বলত অ-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষায়।হিট্টিরা তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি গ্রাস করে নেয়। হিট্টিরা প্রথম বসতি গড়ে তুলেছিল নেসাতে, জায়গাটা বর্তমানে আনাতোলিয়ার কায়সেরিতে। এরপর হাট্টুসাস - এ সাম্রাজ্য স্থাপন করে।হিট্টিদের প্রথম দিককার প্রভাবশালী সম্রাট ছিলেন লাবরানা “সময়কাল ১৬৮০ থেকে ১৬৫০ খ্রিস্টপূর্ব ”। তাঁর সময়েহিট্টিদের রাজধানী ছিল হাট্টুসাস এ। সম্রাট লাবরানা সমগ্র আনাতোলিয়া জয় করেন; এবং তাঁর বংশধরেরা উত্তর সিরিয়া দখল করার পর ব্যাবিলন আক্রমন করে (১৫৯৫ খ্রিস্টপূর্বে)। সাপপিলুলিউমা ছিলেন হিট্টিদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্রাট। তাঁর সময়কাল:১৩৮০ থেকে ১৩৪৬ খ্রিস্টপূর্ব। সম্রাট সাপপিলুলিউমা বিদেশি আক্রমন ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন। কেবল তাই নয়, তিনি উত্তর মেসোপটেমিয়া ও সিরিয়া জয় করেছিলেন। এভাবে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলে হিট্টিরা হয়ে উঠেছিল মিশর, ব্যাবিলন ও আসেরিয়ার সমক, যে সাম্রাজ্য সম্রাট সাপপিলুলিউমার মৃত্যুর পরও টিকে ছিল, অবশ্য নিরন্তর যুদ্ধ করে করে। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চদশ ও চর্তুদশ শতকে এজিয়ান অবধি ছড়িয়ে ছিল হিট্টি সাম্রাজ্য। পুবে আর্মেনিয়া, দণিপুবে মেসোপটেমিয়ার অ-ধ্বাংশ আর দেিণ এখনকার সিরিয়া ও লেবানন। হিট্টি সমাজের ভিত্তি ছিল কৃষিকাজ। তাদের প্রধান কৃষি পন্য ছিলগম ও বার্লি আর গৃহ পালিত পশু লালন পালন করা যেমন ভেড়া- ষাঁড়-গরু। হিট্টিদের আরেকটি বিশিষ্ট দিক হচ্ছে পাহাড় চূর্ণ করা! অর্থাৎ, সেই ৪/৫ হাজার বছর আগে তারা পাহাড় কেটে খনিজ সম্পদের সন্ধান করত এবং সেই সময়ে তারা উত্তোলন করেছে তামা, সীসা, রুপা ও লোহা। কাজেই ধাতুবিদ্যায় তৎকালীন অন্যান্য সভ্যতার চেয়ে অগ্রসর ছিল তারা। হিট্টিরাই সভ্যতায় প্রথম লোহার ব্যবহার করে। হিট্টিরা ছিল বহুদেবতায় বিশ্বাসী। ওদের ধর্মচর্চা মৌলিক ছিল না। হিট্টিদের ধর্মবিশ্বাসে সুমের, ব্যাবিলন, আসুর সভ্যতার প্রভাব ছিল। তারা অন্যদের মতই প্রচুর দেবদেবীর মূর্তি গড়েছিল। হিট্টিদের অন্যতম দেবদেবী ছিল ঝড়ের দেবতা ও সূর্যদেবী।
হিট্টি সভ্যতা আলোচনা প্রসঙ্গে প্রাচীন মিশরের প্রসঙ্গ অনিবার্য। হিট্টিদের উন্নতির শীর্ষ সময়ে, প্রাচীন মিশরের সম্রাট ছিলেন চতুর্থ আমোনহাটপ। সম্রাট চতুর্থ আমোনহাটপ এরই অন্য নাম সম্রাট আখেনাতন। ঐ সময়টাতে সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মিশর এর সঙ্গে হিট্টিদের সংঘর্ষ হয়ে ওঠে অনিবার্য, ফলাফল হিসেবে সংগঠিত হয় খাদেসের যুদ্ধ। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর আগেই মৃত্যু হয় সম্রাট আখেনাতনের, সময়কাল ছিল (১৩১৫/১২৯৬ খ্রিস্টপূর্ব) এরপর মিশরের সম্রাট হলেন ২য় রামেসিস । মতায় বসার অল্পদিনের মধ্যেই শুরু হয়ে যায় খাদেসের যুদ্ধ আর খাদেসের যুদ্ধে সম্রাট ২য় রামেসিসের রথ এর ব্যবহার ছিল উল্লেখ করার মত। খাদেসের যুদ্ধেরপর রামেসেস নিজেকে জয়ী মনে করলেও হিট্টিরাই সিরিয়া নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল। পরে অবশ্য মিশরের সাথে হিট্টিদের সন্ধি হয়, সন্ধিচুক্তি অনুসারে মিশরিয়দের সাথে তারা পন্য আদান প্রদান করত।। হিট্টি সভ্যতার পতনহয় ১২০০ খ্রিস্টপূর্বে। মিশরীয় লেখনিতে হিট্টিদের পতনের কারণ বলা হয়েছে: সহনশীল বিচারব্যবস্থা, যদিও তাতে ব্যাবিলনের প্রভাব ছিল। তবে, ব্যবলনীয় রু বিচারব্যবস্থার তুলনায় হিট্টি বিচারব্যবস্থা যথেস্ট নমনীয় ছিল । প্রথম দিকে মারাক্তক অপরাধের জন্য মৃত্যুদন্ডের বিধান থাকলেও পরে তা বাতিল করা হয় এবং অপরাধীর মৃত্যুদন্ড এমন কি শররীক নির্য়াতন করার উঠিয়ে দেয়া হয়- যা ছিল ওই সময়কারঅন্যান্য সভ্যতার স্বাভাবিক আইন। হিট্টিদের বিচারব্যস্থা ছিল তিপূরণের ওপর ভিত্তি করে প্রতিশোধের ওপর নয়। আর যেহেতু হিট্টিদের সমাজে রাজাই ছিলেন পুরোহিত, সামরিক সেনাপতিও প্রধান বিচারক। প্রথম প্রথম রাজার উপদেষ্টা পরিষদও ছিল, পরে উপদেষ্টা পরিষদ বিলুপ্ত করা হয় আর প্রাদেশিক শাসকদের করা হয় রাজার প্রতিনিধি। একসময় দেখা গেল, প্রাদেশিক শাসকরা নিজেদের মতায়ন বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রকার অপরাধ সংগঠিত করত এবং সামান্যতিপূরণের বিনিময়ে অপরাধ থেকে মুক্তি পেত, ফলে অপরাধের পরিমান বৃদ্ধি পেতে থাকে যার ফলসূতিতে নিজেদের মধ্যে হানাহানি শুরু হয়ে যায়। আর এ কারনেই পতন হয় পৃথীবির প্রাচিনতম একটি সভ্যতার।

No comments:

Post a Comment

free counters
^ Back ToTop