প্রাণী বিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রহস্য সৃষ্টি করে রেখেছিল এটি। যদিওস্থলচর দীর্ঘাকৃতি সরীসৃপ এটি তবুও এটি সারাক্ষণ মানুষ তো বটেই এমনকি প্রাণী বিজ্ঞানীদেরও চোখ এড়িয়ে চলেছিল বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার কমোজে এবং আশপাশের তিনটি দ্বীপে এদের বসতি। এইদ্বীপে আসা কিছু নাবিক এবং জেলের মাধ্যমে প্রথম মানুষ এদের কথা জানতেপারে। অবশ্যই অনেক বাড়িয়ে, রঙ চড়িয়ে। ১৯১২ সালে ওই আগ্নেয় দ্বীপে ভেঙে পড়লো এক যুদ্ধবিমান। কিন্তু বেঁচে গেল ক্ষিপ্র বৈমানিক। গভীর জঙ্গল, দিনের বেলায়ও এখানে আবছা অন্ধকার। এগুলোর মাঝে পথ চলা খুবই দুষ্কর। কয়েক গজ যেতে না যেতেই হঠাৎ শোনা গেল তীক্ষ্ণ হিসহিসানি চোখ তুলে সামনে তাকাতেই দেখতে পেল সে। কিন্তু ওটা কি? ডাইনোসর আজও বেঁচে আছে? নাকি রূপকথার পাতা থেকে জ্যান্ত হয়ে উঠে এসেছে ভয়ঙ্কর ড্রাগন। তের ফুটের বেশি লম্বা, মাংসল গাঢ় বাদামী রঙের শরীর। লম্বা, মোটাসোটা সামনের দুই পা। পিছনের পা দুটি অপেক্ষাকৃত ছোট। আর তার ভয়াল মুখের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে কমলা জিভ। একে ক্লান্ত বৈমানিক। তার উপর সামনে এই জ্যান্ত বিভীষিকা সইতে পারল না। জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ল সে। ঘটনাক্রমে একটি মাছ ধরা জাহাজেরসাহায্যে ঘরে ফিরে এল বৈমানিক। বাড়িফিরে গেল ঠিকই কিন্তু পরিবেশ আর অজানা জীব দর্শনের ভয়াবহতায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলল সে। বিড়বিড় করে বলতে লাগল শুধু একই কথা। ‘আমি দেখেছি... ওকে দেখেছি... গল্প নয়.. সত্যিই ড্রাগন আছে।' স্বাভাবিক নিয়মেই ওই বৈমানিককে চেপে ধরলেন প্রাণী বিজ্ঞানীরা। কিন্তু মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে যাওয়ায় তার কাছ থেকে আর কিছুই জানা গেল না। এরপর ১৯২৭ সালে ওই দ্বীপে নামলেন একদল মার্কিন প্রাণীবিজ্ঞানী, কিন্তু তারা ব্যর্থ হলেন। ঘোষণা করলেন, কমোজোতে কোন ড্রাগনের অস্তিত্ব নেই। এরপর ১৯৫৬ সালে ফরাসী সরকার কিছু খ্যাতনামা বিজ্ঞানী আর চলচ্চিত্র কুশলী নিয়ে গঠিত একটি দল পাঠালো। অবশেষে বুদ্ধি আর ক্ষমতার কাছে হার মানলো প্রাগৈতিহাসিক দানব। কয়েক মিনিটের চলমান চিত্র নিয়ে দেশে ফিরে এলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু ড্রাগনের জীবনযাত্রা সম্পর্কে এবারও কিছু জানা গেল না। আবারও কমোজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন বিজ্ঞানীরা। এবার রুশ এবং ইন্দোনেশিয়ান বিজ্ঞানীদের মিলিত প্রচেষ্টা চলল। এবার আর ফাঁকি দিতে পারল না তারা।
তাদের চালচলন, জীবনযাত্রা, বংশ বৃদ্ধি সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা গেল এবার। ধরাও পড়ল কয়েকটা। জানা গেল, প্রায় এক কোটি বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার মালভূমিতে বাস করত কমোজে ড্রাগনের আদি পুরুষরা। মনিটর জাতীয় গিরগিটির জাতভাই এই ড্রাগন।শ্রীলঙ্কার ফাব্রাগোয়াকেও এর নিকটতম প্রজাতি বলে মনে করা হয়। বর্তমানে এটি পৃথিবীর সবচাইতে বড় গিরগিটি। এরা মাংসাশী। তবে হিংস্র নয়। নির্জনতা প্রিয়। শুকর, হরিণ, কাঁকড়া, পাখি যা পায় সব খায়। গায়ে প্রচন্ড শক্তি। বিশেষ করে লেজে। লেজের ঘায়ে একটা শক্তিশালী ঘোড়াকেও কাবু করে ফেলতে পারে। বর্তমানে তাদের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। শিকারীরা যাতে কমোজে আর তিনটিদ্বীপের ছায়া মাড়াতে না পারে সেজন্যও কড়া আইন করা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment