paponblog

Wednesday, 22 August 2012

রহস্যময় মানব


১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ঘটনাটি ঘটেছিল জার্মানিতে। সড়কের পাশে একটা ছায়াময় জায়গায় কাজ করছিলেন জর্জ ওয়াইকম্যান। পেশায় তিনি মুচি। একমনে জুতা সেলাই করতে করতে তার চোখ পড়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া এক বিশেষ বালকের দিকে
। ছুটির দিন বলে এমনিতেই রাস্তায় মানুষ ছিল কম। তার ওপর বিশেষ এ বালককে খুব বেশি করে চোখে পড়ছে। ছেলেটি হাঁটছিল অদ্ভুত ভঙ্গিতে। পরনে ছেঁড়া-ফাটা পোশাক। ক্লান্ত দেখালেও বোঝা যাচ্ছিল শরীরে শক্তি আছে ব্যাপক। কিন্তু বালকটির হাঁটার ভঙ্গি এতই বিচিত্র যে, ওয়াইকম্যান সেদিকে তাকিয়েই রইলেন। তার মনে হচ্ছিল, ছেলেটি বুঝি জীবনে এই প্রথম হাঁটার চেষ্টা করেছে। কাজ ফেলে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে আলাপ বাড়াতে চাইলেন ওয়াইকম্যান। কিন্তু কাছে গিয়েই তিনি আঁতকে উঠলেন। রক্ত চুইয়ে পড়ছে বালকটির পা বেয়ে! বোঝা যাচ্ছিল হাঁটতে মোটেই অভ্যস্ত নয় সে। গায়ের রঙও কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে আছে। যেন সূর্যের আলো থেকে বহুদিন দূরে ছিল। ছেলেটিকে অনেক প্রশ্ন করেও 'আমি জানি না' ছাড়া আর কিছু উদ্ধার করা সম্ভব হলো না। অবশেষে তার পকেটে হাত ঢুকিয়ে পাওয়া গেল দুটি চিঠি। দুটি চিঠিই সামরিক বাহিনীর চতুর্থ স্কোয়াড্রন লিডার ক্যাপ্টেন ওয়েসেগনিকে লেখা। মুচি ওয়েইকম্যান তখনই তাকে নিয়ে চিঠিতে উলি্লখিত ঠিকানায় রওনা হয়ে গেলেন। বাসায় পেঁৗছানোর পর চিঠি খোলা হলো। প্রাপ্ত তথ্য জেনে রহস্য আরও কয়েক গুণ বেড়ে গেল। ওই চিঠি দুটিতে লেখা ছিল 'এই বালকের নাম কাসপার হুসার, বয়স ১৭।তিনি রাজার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে আগ্রহী। তার বাবা নেই। আমি হতদরিদ্র। ছেলেটির দেখাশোনা করতে পারছি না। দয়া করে ওর জন্য একটা কিছুকরবেন।'
এরপর কাসপারের একটা ব্যবস্থা হয়। তাকে রাখা হয় একটা কক্ষের ভেতর। কিন্তু সেখানে বসেই বিচিত্র সব কাণ্ড করতে থাকে সে। এমনিতে বেশিরভাগ সময় চুপচাপ বসে থাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মূর্তির মতো স্থির হয়ে কী যেন ভাবে। মোটেও কথা বলে না কারও সঙ্গে। কিন্তু দেয়ালঘড়ির শব্দে কাসপার আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করে দেয়। তার এসব ঘটনা এক কান-দুই কান হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়লেদলে দলে মানুষ আসতে থাকে তাকে দেখার জন্য। দর্শনার্থীদের একজন কাসপারকেএকটি খেলনা ঘোড়া উপহার দেয়। সারাক্ষণ সে খেলনাটি আঁকড়ে ধরে থাকে। খাবারের ব্যাপারে তার অবস্থা অন্যরকম। পানি আর রুটি ছাড়া সে কিছুই হজম করতে পারে না।
ধীরে ধীরে কাসপারের অনেক অদ্ভুত ক্ষমতার কথা প্রকাশ পায়। অন্ধকারেও সে দিব্যি দেখতে পেত। তার শ্রবণশক্তিও ছিল অসম্ভব প্রখর। ফিসফিস করে বলা কথাও সে বহুদূর থেকে শুনতে পেত। কাসপারকে অনেকে মানসিক প্রতিবন্ধী বলে সন্দেহ করেছিল। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে কথা বলতে এবং লিখতে শেখে। এরপর তার মুখ থেকে শোনা যায় বিচিত্র এক কাহিনী। মুচি ওয়াইকম্যানের সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে সে ৭ ফুট বাই ৪ ফুট একটি কক্ষে বন্দি হয়ে ছিল। সেই ছোট্ট ঘরে শোবার ব্যবস্থা বলতে ছিল একটা খড়ের গাদা। খাবারে সম্ভবত মাদকজাতীয় কিছু মেশানো থাকত। বেশিরভাগ সময় ঘুমাত সে। তারপর একদিনএক লোক তাকে বের করে এনে দুটো চিঠি ধরিয়ে দিয়ে রাস্তায় ছেড়ে দেয়। সেখানেই দেখা হয় মুচি জর্জের সঙ্গে।যে লোকটি তাকে বন্দি করে রেখেছিল, তাকে অনেক খুঁজেও আর পাওয়া যায়নি।
অনেকে মনে করেন, কাসপার আসলে রাজপরিবারের সন্তান। সিংহাসন থেকে বঞ্চিত করার জন্য তাকে শৈশবে লুকিয়েরাখা হয়েছিল গুপ্ত কোনো কক্ষে। এসব কথা ছড়িয়ে পড়লে ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ডিসেম্বর কাসপার গুপ্তঘাতকের হাতে মারাত্মক আহত হয়। এর তিনদিন পরই মারা যায়। কিন্তু কাসপার আসলে কে, সত্যিই সে রাজপরিবারের সন্তান কি-না, এ সম্পর্কে কারও কোনো ধারণা ছিল না। সবই ছিল রহস্যময়

No comments:

Post a Comment

free counters
^ Back ToTop